গল্প।।”অচেনা রাতের অন্ধকারে” গল্পের (দ্বিতীয় পর্ব)।। কলমে – বিশ্বজিৎ রক্ষিত

১ম পর্ব পড়তে নীচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন…

গল্প।। অচেনা রাতের অন্ধকারে।। বিশ্বজিৎ রক্ষিত

 

২য় পর্ব  

প্রথম পর্বের গল্পের অংশটা পড়ে এটাই মনে হল যে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, “সোনাগাছি” নামের এই পতিতা পল্লী। এখানেতো মেয়েরা পয়সার বা অর্থের বিনিময়ে নিজেদের দেহটাকে পর পুরুষের কাছে বিকিয়ে দেয়, শুদ্ধ ভাষায় পতিতা বললেও একটু নগ্ন ভাষায় বেশ্যা বলা হয়। এরকম সোনাগাছিতে কতো পিতৃ হীন সন্তান যে জন্ম নিয়েছে তার কোন হিসাব নেই। তবে কেন বার বার এই জঘন্য, নোংরা পরিবেশ যুক্ত পতিতাপল্লীতে রাতের অন্ধকারে, এমন ভদ্র, শিক্ষিত, সৎ, রুচিবান ছেলে, মানুষ কিসের অধিকারে এই লাল বাতি এলাকায় ছুটে আসে। আর পাঁচজন লোকের মতো শুধু কি দেহ না অন্য কিছু, কিন্ত সমীরনতো যথেচ্ছ টাকা উড়িয়ে যায়। কিন্তু যত বারই আসে কঙ্কনার কাছে ওর ছেলের মুখটা একটু দেখতে চায় যতবার হাত জোর করে সমীরন অনুরোধ করেছে কঙ্কনা ঠিক ততবারই সম্পূর্ন ভাবে অতিক্রম করে সমীরনকে একদম দূরে সরিয়ে দিয়েছে। আসল ব্যাপারটা কি তাহলে, একটু খোঁজ করা যাক? জায়গাটা পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার অন্তর্গত বাংলাদেশের সীমান্ত বর্তি গ্রাম, নাম পাথরঘাঁটা, মূলত পূর্ববঙ্গের থেকে আগত মানুষ জনদের দ্বারা গঠিত হয়েছে। এই গ্রাম খানি, পাশে দিয়ে পদ্মার একটি শাখা নদী পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের দিকে চলে গিয়েছে,  ঐ পাথরঘাঁটা গ্রামেরই এক পাশে হারাধন বাবু,  মানে হারাধন ময়রার স্ত্রী শোভনা দেবী! সবাই শোভা, শোভা করেই ডাকে। ছেলে “অতনু” আর মেয়ে কঙ্কনা।

হারাধনবাবুর ভরা এবং শুখি সংসার! বাংলাদেশের যশোর জেলা থেকে উদ্বাস্তু হয়ে এদেশে বসতি স্থাপন। নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরা, বিস্তৃত চওরা রাস্তায় ভ্যান চালনা আর এর ওর জমিতে চাষ বাস। এরকম জীবিকার মাধ্যমে জীবন অতিবাহিত করে। একদম বলতে গেলে খালি হাতেই এদেশে পা‌ দিয়েছে বলতে গেলে একদম খালি হাতেই এদেশে পরিবার নিয়ে এসেছিলেন হারাধন বাবূ, সরকার থেকে থাকার ঘর, দু কাঠা জমি আর ছোট্ট একটাঘর দিলেও আয় বলতে মোটা মুটি অন্যর জমিতে কম বেশি কাজ করা ভ্যান চালানো প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হলেও ধীরে ধীরে হারাধন বাবুর সহ্য হয়ে গিয়েছিল। ঐ গ্রামের শেষের দিকে একটা প্রাইমারি ও একটা হাইস্কুল। হাইস্কুলে ক্লাস সেভেনে অতনু, আর ক্লাস থ্রিতে কঙ্কনা পড়াশোনা করে। প্রতি বছর দুই ভাই বোন প্রতি ক্লাসে ভালো ভাবে পাশ করে কঙ্কনা ক্লাস সিক্সে থেকে সেভেন আর অতনু এবার মাধ্যমিক। হারাধন বাবুর সঙ্গে বাংলাদেশে পাশাপাশি থাকতো একটি পরিবার ঐহারাধন বাবুর প্রতিবেশী, একই পাড়ায় থাকে। তার নাম গোকুল বাবু, তিনি কৃষ্ণনগরে কাজ করেন, গোকুল বাবু হারাধন বাবুর থেকে বছর খানিক আগে এই দেশে এসে ছিলেন, তার দুই মেয়েও সঙ্গে কঙ্কনার খচব ভাব। কঙ্কনা ঐদুই বোনের সঙ্গে গল্প খেলা করে, এদেশে এসে গোকুল বাবুর সঙ্গে হারাধন বাবুর একটা পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি হয়ে ছিল। হারাধন বাবুর স্ত্রী শোভনা দেবী গোকুল বাবুর সঙ্গে ভাই বোনের সম্পর্ক পাতিয়ে ছিলেন, ভিষন একটা হৃদযতা তৈরি হয়ে ছিল দুটি পরিবারের মধ্যে, সব ঠিকঠাকই চলছিল। সে দিন আষাঢ় মাস পরেছে দুই কি তিন দিন হবে। আকাশে মেঘের ঘন ঘটা সবে শুরু হয়েছে, মাঠ ঘাট তখনো শুকনো। মাঝে মাঝে অল্প অল্প বৃষ্টি। হারাধন বাবু ভ্যান নিয়ে ফিরবার পথে দুটো প্যাসেঞ্জার নিয়ে ফিরবার পথে হঠাৎ ঘটে গেল একটা অ্যাকসিডেনট। দুর থেকে আসা একটা চার চাকার গাড়ি বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রিকশায় ধাক্কা মারে। হারাধন বাবুর ভীষণ চোট লাগে উনি নিচে পরে যান। সংসার খানা যেন তাসের ঘরের মতো ভেঙে চুরমার হয়ে ভেঙে পড়ল।

শুরু হল নতুন অধ্যায়।

ভাই ফোঁটা, রাখির দিন দুই বাড়িতে খাওয়া, দাওয়া, আনন্দ ফুর্তি, চলতো,গোকুল বাবুর দুই মেয়ে কোন ছেলে নেই আর হারাধন বাবুর এক ছেলে এক মেয়ে, হারাধন বাবুর ছেলে অতনুকে তিন বোন মিলেই রাখি পরাতো। ভাই ফোঁটার সময় তিন বোন ফোঁটা দিত অতনুকে, এমনি করে দিন গুলো বেশ ভাল ভাবেই চলছিল। হারাধন বাবুর অ্যাকসিডেনট সব কিছু যেন ওলোট পালোট হয়ে গেল।

ধীরে ধীরে হারাধন বাবুর সংসারে অভাব তো কমবেশি ছিল ধীরে আরো অভাব যেন সংসারকে ক্রমশ আরো বেশি অভাবের পরিমাণ যেন জেঁকে বসল।কি আর করার আছে, শোভনা দেবীর সঞ্চিত যতটুকু গয়না ছিল সংসারের খাদ্য খাবার আর অসুখ বিসুখে এক এক করে কোনটা বন্ধক আবার কোনটা বিক্রি। এইভাবে এক এক করে চলেগেল খুব সামান্য অল্প কিছু আর অবশিষ্ট রইল, শোভনাদেবী ভাবলেন এমন ভাবে চলতে পারে না। ঝিনুক কেটে খেলেও এক দিন রাজার ভান্ডার ফুরিয়ে যায়। অতনু মাধ্যমিক পাশ করেছে। আর কঙ্কনা সবে নাইনে উঠেছে।

দুজনেরই পড়াশুনা একদম বন্ধ হয়ে গেল। গোকুল অতনুর কাজের জন্য অনেক চেষ্টা করেও তেমন কিছু যোগার করতে পারল না। অনেকদিন পর গোকুল বাবু বাড়ির কাছাকাছি একটা চালের গুদামে কাজের ব্যবস্থা করল।

কিন্তু এতে আর কতো মায়না দেবে?

একটু সংসারে শুবিধা হবে ঠিকই কিন্তু চাহিদার থেকে খুবই নগন্য।গোকুল বাবু কাজে থেকে বাড়ি এলো দু দিনের ছুটিতে এসে হারাধন বাবুকে দেখতেএসে হারাধন বাবুর শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ লাগলো। শোভনাদেবী গোকুলবাবুর কাছে কান্নায় ভেঙে পড়ল। গোকুল বাবুকে একটা কাজের ব্যবস্থা করতে বললো। গোকুল বাবুর সঙ্গে শোভনাদেবীর অনেক ব্যাপারে অনেক কথা হল। শোভনা দেবীতো কোনও হাতের কাজ জানে না। তাই লোকের বাড়িতে কাজ ছাড়া অন্য কি আর কাজের ব্যবস্থা করবে? গোকুলবাবুর এক পরিচিতকে ধরে শোভনার জন্য একটা কাজের ব্যবস্থা করলো। গ্রামের বাড়িতেই সারা জীবনধরে কাটিয়েছে। শহর কী সেরকম ভাবে কোনও দিন দেখেনি। বাংলাদেশেও সেই গ্রামের বাড়িতেই কাটিয়েছে। এখানেও তাই। গ্রাম ! গ্রামের পথ, গ্রামের পথ ঘাট, নদী, পুকুর, সড়ক পথ, দীর্ঘ পথ পার হয়ে পাতানো ভাই এর হাত ধরে নগর কলকাতায় প্রথম পদার্পণ। কলকাতার কতো কথা শোভনাদেবী শুনে ছিলেন কিন্তু কখনো দেখবেন এতো কাছে থেকে তা ভাবতেও পারে নি। যাইহোক ছেলে, মেয়ে, স্বামীকে পিছনে ফেলে শোভনা কলকাতায়।

যে বাড়িতে কাজের জন্যে শোভনাকে গোকুল সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে সেটা শহর কলকাতার অবস্থাপূর্ণ এক বড়ো লোকের বাড়ি।

ট্রেনে করে শিয়ালদহ সেখান থেকে বাসে! বাস থেকে রিক্সায় ঐ ভদ্র লোকের বাড়ি। রিক্সায়ালাকে থামিয়ে পথ চলতি মানুষকে হাতে ঠিকানাটা দিয়ে বললো “এই ঠিকানাটা একটু বলে দেবেন”?  ভদ্রলোকটা ঠিকানাটাকে পড়ে বললো, এই রাস্তা থেকে ডান দিকে ঘুরে দ্বিতীয় হলুদ রঙের পুরনো বাড়িটা, রিক্সা খানা আবার চলতে শুরু করলো। এক জায়গায় এসে থেমে গেলো রিক্সা খানা। নামুন বাবু, রিক্সা থেকে নেমে কাগজ দেখে বাড়ির নাম্বার টাকে মিলিয়ে নিল গোকুল বাবু। অনেক দিনের পুরনো কোন কোন জায়গায় পলেসতারা খসে পড়ছে। কোন কোন জায়গায় ইটের মাথাবার হয়ে ইটের মুখ দেখা যাচ্ছে, অনেক দিনের পুরনো তো। তাই বাড়ির রংগুলো বেশির ভাগ টাই একটু কম বোঝা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও আবার জংলা জাতীয় কোন বট, অশ্বত্থ জাতীয় ছোট গাছ জন্মে আছে। অক্টোবর মাসের শেষ অথবা নভেম্বর মাসের শুরু হবে, কলকাতায় এই সময় জাঁকিয়ে শীত না পরলেও মোটামুটি ঠান্ডার ভাবটা ভালোই উপলব্ধি করা যায়। বেলাপড়ে এসেছে, দিন ছোট হয়ে এসেছে, সূর্য পশ্চিমে ঢলে পরেছে। একে একে পাখিরা বাসায় ফিরতে শুরু করেছে। উত্তরের বাতাস তেমন ভাবে আসেনি তবে প্রকৃতিতে একটু ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব আছে। রোদের তেজ তেমন নেই। রাস্তায় লোক জন তেমন নেই।

 

কলিং বেলটা বাজতেই উপর থেকে ডাক এল “কে?” গোকুলবাবু নিচে থেকে চিৎকার করে বললেন “আজ্ঞে আমরা”!

আমরা কে, কোথা থেকে আসছেন? অনেক দূর থেকে। সেই নদিয়া জেলা থেকে। আজ্ঞে ভূবনবাবু আমাদের পাঠিয়েছে। আপনাদের এই বাড়ির ঠিকানা দিয়েছে। বাড়ির কর্তি সীমাদেবী ভাবলেন এই অসময়ে আবার কে এলোরে!

“ও বাতাসী একটু দ্যাখনা কে এল একটু দরজাটা খুলে দ্যাখ না কে?

বাতাসী এ বাড়ির কাজের লোক অনেক দিনের পুরনো। কাজ ছেড়ে দেশের বাড়িতে চলে যাবে, তার জায়গায় শোভনা ওরফে শোভাদেবী এসেছেন। দরজা খুলতেই বাতাসী দেখল একজন ভদ্র মহিলা ও একজন ভদ্র লোক। বাতাসী জিজ্ঞেস করলো “কাকে চাই”!

আমাদের ঠিকানা দিল আর বললো, এখানে নাকি কাজের জন্য লোক লাগবে। তাই আমাদের পাঠিয়েছে।

“আসুন ভিতরে” বলে বাতাসী ওদের ওপরে নিয়ে গেল। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বাতাসী চিৎকার করে বললো “দিদিগো দ্যাখ তোমার বাড়িতে নতুন লোক এসেছে। হাসতে হাসতে বাতাসী বললো কাল থেকে তাহলে আমার ছুটি। কি বকছিস আবোল তাবোল? হ্যাঁ গো দিদি। সীমাদেবী দেখলেন মাঝবয়সী একজন পুরুষমানুষ আর একজন মেয়েমানুষ। সীমাদেবী খাটের উপর ঠ্যাং তুলে পান চিবোছিলেন, সেকেলের মানুষতো। হাত, পা ধুয়ে ভীতরে ঢুকে ওরা দুজন দেখলো উনি বয়সে বড়। দুজনেই প্রনাম করলো।

থাক থাক বলে “বোসো”!

একই পাড়ায় পাশাপাশি থাকি সম্পর্কে আমরা ভাই বোন, নদিয়া জেলার বাংলাদেশের সীমান্ত বর্তী”পাথরঘাটা” গ্রামের বাসিন্দা। বাতাসী?

বলুন দিদি!

ওদের জন্য চা করে আনতো আর কি আছে কিছু খেতে দে।

তারপর?

গোকুলবাবু তারপর বলতে লাগলেন, আমরা পূর্ববঙ্গের যশোর জেলার লোক। ভগ্নিপোত ভ্যান রিক্সা চালাতো বছর খানেক আগে অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে ঘরে বসা। ছেলেটা মাধ্যমিক পাশ করেছে আর মেয়েটা এইট থেকে নাইনে উঠেছে। সংসার আর চলছে না। বাধ্য হয়ে বাতাসী প্লেটে করে কিছু খাবার আর চা, জল দিল। খাও অনেক দূর থেকে এসেছ।

দ্যাখ আমার দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে চাকরি করে, ছোট ছেলে কলেজে পড়ে, আর মেয়ে ইলেভেনে পড়ে। বয়স্ক শাশুড়ি আছে তাকে একটু নিজের মতো করে দেখভাল করতে হবে। আমার স্বামী ছেলে সকাল বেলা অফিস যায় তাদের রান্নাবান্না করা, তা ছাড়া ঘরদোর গোছানো। টাকা পয়সার সমস্যা হবে না। মাসে একবার গিয়ে টাকা পয়সা দিয়ে আসবো, দু তিন দিন থাকবো, গুছিয়ে দিয়ে চলে আসবো

শোভনা সীমা দেবীকে বললো। প্রাথমিক ভাবে মোটামুটি কথা হয়েগেল, আজ রাতে বাতাসী সব বুঝিয়ে দেবে কাল থেকে তাহলে লেগে যাবি। যাবার সময় গোকুল বাবু সীমা দেবীকে নমস্কার করে বললো “আমার বোন টাকে দেখবেন, ও খুব দুঃখি ।

গোকুলবাবু আর কিছু সময় অপেক্ষা করার পর একটু ছাদে ঘুরে, সব কিছু ঘুরে দেখে চলে গেলেন। কোন রক্তের সম্পর্ক নেই দুজনের মধ্যে তবুও একজন আর একজনের হৃদয়ের কতো কাছের ।

রাতেরবেলা নিচের ছোট্ট একটা ঘরে ওরা দুজন একসঙ্গে ঘুমালো। দুজন একটু রাত পর্যন্ত অনেক কথা অনেক গল্প বিশেষ করে গ্রামের গল্প, সংসারের গল্প, ছেলে, মেয়ে, স্বামীর কথা, বাতাসী ও ওর নিজের কথা, স্বামী, ছেলে, ছেলের বৌ-এর কথা। এই বাড়ির প্রতিটি মানুষের সমন্ধে যতটা বলা ভাল করে বুঝিয়ে দিল এ বাড়ির কর্তা, গিন্নিমা, বড়ছেলে, ছোটো ছেলে, মেয়ে, এক এক করে সব বুঝিয়ে বলে দিল বাতাসী একসঙ্গে দুজনে মিলে অনেক রকম গল্প করলো। রাতেরবেলা বাতাসী ওর যা কিছু ছিল সব ঠিকঠাক করে গুছিয়ে নিল তারপর শোভনাকে সমস্ত কিছু বুঝিয়ে দিল।

ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে বিছানা ছারার অভ্যাস বরাবরের তাই আজ আর অন্যথা হল না। রাতের খাবার থালা বাসন গুলো বাইরের কলের ধারে স্তুপ কারে রাখা ছিল তাতে দল বেঁধে কাকের দল খাবারের জন্য একটা কাক আর একটা কাকের সঙ্গে মার পিঠ, ডানা ঝাপটানি শোভনা এমন দৃশ্য গ্রামের বাড়িতে কোন দিন দেখেনি এই প্রথম বারের জন্য দেখলো শোভনা,এই শহরের বুকে হাঁ করে এক দৃষ্টে তাকিয়ে রইল,

শহরের বুকে শোভনার আর এক নতুন জীবন শুরু হল। গৃহ কর্ম, রান্না, ঘর গোছানো, বিছানা গোছানো, কাপড় জামা কাঁচা ধোঁয়া, সুকনো হলে ঘরে তোলা, চা জল খাবার গোছানো গাছানো সমস্ত কাজ কর্ম করতে করতে কোথা থেকে যে দিন রাত চলে যায় আবার পরের দিন চলে আসে, দিন যায়, মাস চলে যায়, এক এক করে বছর ও চলে যেতে লাগলো শোভনার, বাড়ির প্রতি কটা মানুষের খুব ই প্রিয়, খুব ই আপন হয়ে গেছে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই, কলকাতা থেকে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সময় স্বামীর জন্য ঔষধ পত্র, ছেলে মেয়ে র জন্যে এক একবার এক এক রকম নতুন নতুন খাবার নিয়ে যায় শোভনা, নিতে কষ্ট হলেও তবু ও কষ্ট করে নিয়ে যায়, ছেলে মেয়ে কতো বললেও কিছু মাথায় নিত না।

কঙ্কনা সারা দিন ঘর দোরের কাজ নিয়ে ই ব্যস্ত হয়ে থাকে তার পর অসুস্থ বাবার দেখভাল, সময় মতো ঔষধ খাওয়ানো, ঘর দোর গোছানো গাছানো এ গুলো তো আছেই, আগে পাশের বাড়ির বন্ধু দের সঙ্গে কতো গল্প গুজব খেলা ধুলো করত এখন সেই ফুরসত টুকু জোটে না, তারপর অসুস্থ বাবা একা ফেলে যেতে ও পারে না, ধীরে ধীরে কঙকনা তো বড়ো হচ্ছে, শরীর স্বাস্থ্য ও চোঁখে দেখবার মতো, দাদা ঘরে থাকে না, মা নেই, বাবা তো ঘরে থেকেও নেই, জেল খানার মতো বদ্ধ জীবন শুরু হল কঙকনার। এমনি করে দিন যায়, সপ্তাহ যায়, মাস যায়, ধীরে ধীরে বছর ও চলে যেতে লাগলো। আগে থেকে কঙ্কনাকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগে, চোঁখ, নাক, মুখ, ফর্সা গায়ের রং, এক গোছা লম্বা কালো চুল, পূর্ণ এক নারীর মতোই রূপ ফুটে উঠেছে, যেন দূরে থেকে পূর্ণিমার চাঁদ উকি মারছে। সবই ঠিকঠাক চলছিল, হঠাৎ একদিন পাথর ঘাটা গ্রামের থেকে এক জন পরিচিত খবর নিয়ে এল শোভনা দেবীর স্বামী হারাধন ময়রা গত কাল রাতে ইহলোক ত্যাগ করে পরলোকে গমন করেছেন। শোভনা যেন পৃথিবীতে একা হয়ে গেলেন। আরেক সংগ্রাম শুরু হল শোভনার জীবন পথে। তড়িঘড়ি ঐ বাড়ি থেকে টাকা পয়সা নিয়ে নদিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *