বিয়ের পর মৌসুমীর একেবারে নাকাল অবস্থা। অনেকটা যেন ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’ দশা। বিয়ের আগে অফিস যাওয়ার সময় চলত মায়ের ওপর চোটপাট, হুকুমজারি। আহ্লাদি মেয়েকে যথাসময়ে অফিস রওনা করাতে ঘাম ছুটে যেত মায়ের। ব্রেকফাস্ট রেডি করে,লাঞ্চ বক্স প্যাক করেও রেহাই ছিল না। হাতের কাছে লিপস্টিক, জলের বোতল না পেলে হুলুস্থুল কাণ্ড বাধাতো মেয়ে। তটস্থ মা চরকির মতো ঘুরতেন মেয়ের পিছন পিছন। রাত আটটায় বাড়ি ফিরে, মেয়ে বসত বাবার সঙ্গে আড্ডায়। সারাদিন অফিসের নানা কথা নিয়ে ননস্টপ বকরবকর। শুরু হতো মায়ের আর এক প্রস্থ মেয়েকে আপ্যায়নের পালা। শরবত, টুকিটাকি স্ন্যাক্স সজিয়ে দিতেন মেয়ের মুখের সামনে। এক ঘন্টা এসবের পর মেয়ে চলতো নিজের টং-এর ঘরে। এরপর লো ভলিউমে মিউজিক চালিয়ে রিল্যাক্স! এটা ধরে নিন ফ্ল্যাশব্যাক।
তবে ফ্ল্যাশব্যাক ভুলে যান। সকালবেলায় নিজের ব্রেকফাস্টের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির অন্যান্যদের ব্রেকফাস্ট তৈরি করতে হয় এখন। সেটাও আবার এক একজনের এক এক রকম পছন্দের মতো। রান্নাটা রাঁধুনি দিদি করলেও গুছিয়ে নিতে হয় নিজেকেও। রাতে বাড়ি ফিরে সামান্য ফ্রেশ হয়েই ঢুকতে হয় রান্নাঘরে। শাশুড়ির সঙ্গে হাত লাগাতে হয় ডিনার অ্যারেঞ্জ করার জন্য। গরম গরম রুটি সার্ভ করার নিয়ম এ বাড়িতে। সবার খাওয়া-দাওয়া মিটলে তবে নিজের ঘরে যাওয়া। সেখানেও বহুরকম আবদার নিয়ে অপেক্ষামাণ বরমশাই। সৃজাতার এখন আর নিজস্ব সময় বলে কিছু নেই। আজকাল তাই খুব ডিপ্রেসড লাগে ওর।
এই চিত্রটা কম-বেশি অনেকটা একইরকম সব আধুনিক মেয়েদের। সদ্যবিবাহিতা কর্মরতা মেয়েদের হঠাৎ বদলে যাওয়া জীবনে ব্যালান্স রক্ষা করাটা বেশ চাপের। তাঁদের জন্যই রইল কিছু পরামর্শ।
- অফিসে কাজের চাপ, স্ট্রেস- তো থাকবেই। আপনাকে একটু বুদ্ধি করে চলতে হবে। অফিস আর নতুন সংসার-একসঙ্গে সামলাতে আপনাকে জানতে হবে ব্যালান্সিং অ্যাক্ট।
- বিয়ের আগে আপনার কাজ, কাজের ধরণ, টাইমিং নিয়ে হবু শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করে নিন।
- টাইম ম্যানেজমেন্ট জানাটা খুবই জরুরি। এটা যদি একবার রপ্ত করে নিতে পারেন দেখবেন কোনও অসুবিধাই হচ্ছে না।
- অফিস সঠিক সময়ে আসুন। প্রয়োজন হলে একটু আগেও আসতে পারেন, অফিসে এসে কী কী কাজ করবেন না। প্রায়োরিটি অনুযায়ী একটা টু ডু লিস্ট তৈরি করে নিন।
- বরং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের কাজ শেষ করার চেষ্টা করুন। অফিসের কাজ অফিসে বসেই শেষ করার চেষ্টা করুন। অফিসের কাজ বাড়িতে বয়ে না নিয়ে যাওয়াই ভালো।
- লাঞ্চের পর বর বা শাশুড়িকে একবার ফোন করে খোঁজ নিন- তারা খেয়েছেন কিনা বা ওষুধটা মনে করে সঠিক সময়ে খেয়েছেন কিনা- জিজ্ঞাসা করুন। এই ছোট ছোট জিনিষগুলোতেই দেখবেন তাঁরা খুশি হবেন। একটা কথা মাথায় রাখবেন, তাঁদেরও তো আপনার কাছ থেকে কিছু এক্সপেকটেশন থাকে।
- অফিস থেকে ফিরে সাংসারিক কাজে শাশুড়িকে একটু সাহায্য করুন। যদি ইচ্ছে না করে তাহলে বাড়িতে সাহায্য করার জন্য লোক রাখতে পারেন।
- মাঝে মাঝে অফিস থেকে এক-দু’দিন ছুটি নিয়ে পরিবারের সকলে মিলে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন।
- অফিস থেকে ফিরতে দেরি হলে আগে থেকে ফোন করে জানিয়ে দিন। এটা মাস্ট।