প্রাকবিবাহ স্বাস্থ্যঃ কোষ্ঠী নয় পরীক্ষা হোক শোনিতের

আজ আমরা অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন। বিয়ের আগে কোষ্ঠী মেলানোর চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছেলে-মেয়ের শারীরিক কম্প্যাটেবিলিটি বিচার করা। কারণ সুখী, বিবাহিত জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ শুধু ভালো থাকাই নয়, সুস্থ থাকাও। কিন্তু দাম্পত্য জীবনে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে কোনও একজন সঙ্গীর শারীরিক সমস্যা। এর ফলে ব্যাহত হতে পারে স্বাভাবিক বৈবাহিক জীবন। তবে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তাই বিয়ের আগেই সজাগ হন, নড়েচড়ে বসুন । এ বিষয়ে অদ্বিতীয়া ম্যাগাজিনকে বিস্তরে জানালেন, বিশিষ্ট ইউরোগাইনিকলজিস্ট ডঃ মল্লিকনাথ মুখোপাধ্যায়।

প্রিম্যারিটাল চেকআপ কী?

বিয়ের আগে হবু বর ও কনের বিশেষ কয়েকটি রক্ত পরীক্ষা করা হয়, যাতে বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনও সমস্যার সৃষ্টি না হয়। মেডিক্যাল চেকআপে যদি কোনও শারীরিক সমস্যা ধরা পড়ে তাহলে তার যথাযথ চিকিৎসা করা প্রয়োজন। এই চেকআপের মাধ্যমে দেখে নেওয়া হয় আদৌ ছেলে-মেয়ের মধ্যে বিয়ে সম্ভব কিনা। কারণ, আজকের হবু বর-কনে ভবিষ্যতের বাবা-মা, যার ওপর নির্ভর করবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। তাই বিয়ের আগে ছেলে-মেয়ের কোষ্ঠী বিচার করার চেয়েও অনেক বেশি জরুরি মেডিক্যাল চেকআপ। এক্ষেত্রে টেস্টের মাধ্যমে ছেলে-মেয়ের প্রজনন ক্ষমতা, আগামী প্রজন্মের জন্মগত কোনও রোগের সম্ভবনা থাকবে কিনা সে সম্পর্কে জানা যায়।

যে কোনও অসুখ বা শারীরিক সমস্যায় দু’টি পর্যায় থাকে – ক্লিনিক্যাল স্টেট এবং প্রি-ক্লিনিক্যাল স্টেট। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, কারও হয়তো প্রচন্ড সুগার, সেক্ষেত্রে কেটে গেলে সহজে শুকোচ্ছে না, বা বারবার ইউরিন ইনফেকশন হচ্ছে- এই লক্ষণগুলো দেখলেই সহজে বোঝা যায় ওই ব্যক্তি হয়তো সুগারের সমস্যায় আক্রান্ত। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে ক্লিনিক্যাল স্টেট। আবার অনেক সময় রোগের কোনও বহিঃপ্রকাশ নেই, কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গেল সুগার হয়েছে। একে বলা হয় প্রি-ক্লিনিক্যাল স্টেট। এক্ষেত্রে রোগ অনুযায়ী কয়েকটি পরীক্ষা করানো হয় এবং ট্রিটমেন্ট করা হয়।

প্রি-ম্যারিটাল চেকআপের মূল লক্ষ্যই হল প্রাথমিক স্তরে রোগ খুঁজে বার করে, তার সঠিক ও যথাযথ চিকিৎসা করে সারিয়ে তোলা। যাতে হবু বর-কনের ভবিষ্যৎ দাম্পত্য জীবন সুখী ও স্বাস্থ্যকর হয়।

কী কী টেস্ট করা জরুরি?

প্রি-ম্যারিটাল চেকআপে হবু বর-কনেকে কিছু আলাদা আলাদা মেডিক্যাল টেস্ট করাতে হয়। কিছু পরীক্ষা আবার ছেলে-মেয়ে উভয়কেই করতে হয়।

ছেলেদের জন্যঃ

  • বিয়ের আগে ছেলেদের সিমেন অ্যানালিসিস করে স্পার্ম কাউন্ট ঠিক রয়েছে কিনা, তা অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখা উচিত। সমস্যা থাকলে উপযুক্ত চিকিৎসা করা প্রয়োজন, যাতে বিয়ের পর সন্তান ধারণে কোনও সমস্যা না হয়।
  • অনেক ছেলেরই মামস হয়। মামস টেস্টিসকে অনেকটা নষ্ট করে দেয়। ডাক্তারি ভাষায় একে মামস আরকাইটিস বলে। এক্ষেত্রে টেস্টিস স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক ছোট হয়ে যায়। ছোটবেলায় এই সমস্যা বোঝা না গেলেও বিবাহ পরবর্তীকালে স্পার্ম কাউন্ট কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে সন্তান ধারণ না-ও হতে পারে।

মেয়েদের জন্যঃ

মেয়েদের স্বাভাবিক রিপ্রোডাক্টিভ পিরিয়ড ২০-৩৫ বছর। তবে যত বয়স বাড়তে থাকে ডিম্বাণুর সংখ্যা ও গুণগত মান ক্রমশ কমতে থাকে। ফলে ‘মা’ হতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই বিয়ের আগে মেয়েদের হরমোনাল স্ট্যাটাস পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তার জন্য কিছু টেস্ট করা দরকার।

  • FSH (ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন)
  • LH (লিউটিনাইজিং হরমোন)
  • AMH (অ্যান্টিমুলেরিয়ান হরমোন)

এই তিন রক্ত পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া হয় ওভারিতে ডিম্বাণুর পরিমাণ কতটা। সাধারণ AMH-এর পরিমাণ হওয়া উচিত ২-৪ নেনোগ্রাম। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে AMH ক্রমশ কমতে থাকে। কোনও মহিলার AMH যদি ০.৫ নেনোগ্রাম হয় তাহলে বুঝতে হবে তার ডিম্বাণু প্রায় নিঃশেষ হয়ে এসেছে এবং খুব শীঘ্রই মেনোপজ হতে পারে। AMH-এর পরিমাণ যত কমবে সন্তান ধারণ করার সম্ভবনা ক্রমশ কমবে। যদি গর্ভধারণ করেনও, তাতেও কিন্তু মিসক্যারেজের সম্ভবনা থেকে যায়।

বেশিরভাগ মেয়েদেরই পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যা থাকে। এটি পুরোপুরি কখনই সারে না। তবে ওষুধের দ্বারা কন্ট্রোলে রাখা যায়। সঠিক সময়ে এই সমস্যা ধরা না পড়লে এবং যথাযথ চিকিৎসা না করালে বিবাহ পরবর্তী জীবনে হরমোনে গন্ডগোল, থাইরয়েড, ব্লাডসুগার, প্রেশার, কোলেস্টেরলের মতো নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই সমস্যা জানতে হলে অবশ্যই আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করাতে হবে।

এছাড়া হবু বর-কনে উভয়েরই ব্লাড সুগার, ব্লাড প্রেশার, থাইরয়েড, ব্লাড গ্রুপ ইত্যাদি পরীক্ষাও করে নেওয়া প্রয়োজন।

কতদিন আগে পরীক্ষা করা জরুরি

বিয়ের অন্তত ৬ মাস আগে এই পরীক্ষাগুলো করা ভালো। যাতে সমস্যা থাকলে সময় থাকতেই চিকিৎসা করা যায়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *