নতুন বছরে পয়লা অনুপ্রবেশকারী তৃতীয় ঢেউ। অতিথি পঞ্চাশ পেরোনো, একেবারেই না। তাই ফোকাস হোক সংসার। বিয়ে ব্যাপারটাই বেশ একটা ভারী-কঠিন ব্যাপার স্যাপার। নতুন সঙ্গী, নতুন সংসার, নতুন বাড়ি, নতুন পরিবার, এককথায় একেবারেই নতুন জীবন। এই জীবনে যেমন আনন্দ আছে, ঠিক তেমনই মনে একটা ভয়ের গুরগুরানিও আছে। আফটারঅল, জন্ম থেকে আপনি যেখানে ছিলেন, তাঁদের ছেড়ে চলে আসতে হবে, ঘর বাঁধতে হবে পুরোপুরি অজানা একটি বাড়িতে। বিয়ের ফলে আপনি অনেক কিছু পেলেন ঠিক কথা, কিন্তু সেগুলো সবই প্রায় আপনার কাছে নতুন, এটাও ঠিক। তাই এত কিছু নতুনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া একটু সময় এবং পরিশ্রমসাপেক্ষ তো বটেই। তবে জানেন তো সব মুশকিলেরই আসান উপায় আছে। আর এই মুশকিলকেই আসান করার জন্য আমরা আছি আপনার সঙ্গে। নতুন সংসারে কি কি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়, আর সেগুলির সমাধান রইল আপনাদের জন্যে-
এক নম্বর চ্যালেঞ্জ- ভাগ করে নেওয়ার সমস্যা
এটা তো করতেই হবে। নতুন একজনের সঙ্গে আপনাকে জীবন ভাগ করে নিতে তো হচ্ছেই, তার সঙ্গে খাটবিছানা, ওয়াশরুম, আলমারি, সময়…অনেক কিছুই ভাগ করে নিতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে দেখতে গেলে এগুলো তেমন কোনও অসুবিধেই নয়। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনের অভ্যেস পাল্টে ফেলাটা তো আর সোজা কথা নয়। এসব কিছু মানিয়ে নিতে দু’জনেরই একটু সময় লাগার কথা। বিশেষত, দুজনেই আলাদা পরিবারের, আলাদা নিয়মকানুনের মধ্যে মানুষ হয়েছেন। যেটা আপনার চোখে ঠিক, সেটা আপনার স্বামীর চোখে হয়ত বিসদৃশ ঠেকতে পারে, আবার যেটা তিনি সঠিক বলে ভাবছেন, আপনি সেটা দেখে ভিরমি খেলেন, এটাও সম্ভব।
কি করবেন- সময় দিন পরস্পরকে এবং তাঁর কোনও ব্যাপার আপনার কেমন-কেমন মনে হলে সেটা তাঁকে খুলে বলুন। উল্টোদিকে তাঁর কথাটাও জানার চেষ্টা করবেন কিন্তু। এরপর মাঝামাঝি একটা রাস্তা বের করে নিলে এবং দু’জনে সেটা মেনে চললেই দেখবেন প্রবলেম সলভ। মোদ্দা কথা অ্যাডজাস্টমেন্ট।
দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ- নতুন নিয়মের গাঁটছড়া
প্রত্যেকটি পরিবারের নিজস্ব কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। আপনার পরিবারেও ছিল, সেরকমই আপনার স্বামীর পরিবারেরও আছে। যেমন আপনাদের পরিবারে হয়তো আত্মীয় বলতে বন্ধুবান্ধবদেরকেও বোঝানো হয়, কিন্তু আপনার শ্বশুরবাড়িতে সেগুলো মানা হয় না। কিংবা মনে করুন আপনাদের বাড়িতে পুজোআচ্চার ঘটা বেশি ছিল, নিয়মিত সন্ধ্যারতি হত। শ্বশুরবাড়িতে এসে দেখলেন, তাঁদের সেসবের কিছু নেই।
কি করবেন- দু’টি পরিবারের সব নিয়মই যে মিলবে, এমন কথা ভুলেও ভাববেন না। নতুন নিয়মে মানিয়ে নিতে প্রথম-প্রথম একটু অসুবিধে হবে আপনার। কিন্তু চেষ্টা করুন। তবে বেগতিক দেখলে তাঁদের বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করুন যে কেন আপনার সেই নিয়মটি মেনে চলতে অসুবিধে হচ্ছে। তবে বিপ্লবী হয়ে আবার বিপ্লব করতে যাবেন না! একটু ধীরেসুস্থে এগোবেন। ট্র্যাকে দৌড়তে সকলের ভাল লাগে, সংসারে নয়! তাই না?
তিন নম্বর চ্যালেঞ্জ: খাওয়াদাওয়ার নতুন নিয়ম
বাঙালি পেটুক বলে ভীষণ পরিচিত।আর তাই পেটে টান পড়লে কারওর মাথাই ঠিক থাকে না। আর বিশ্বাস করুন, বিয়ের পরে এই খাবারদাবার নিয়েই তৈরি হয় বড় সমস্যা। যতই আপনার বাঙালি পরিবারে বিয়ে হোক না কেন, দেখবেন একটু না-একটু আলাদা রয়েছেই। সেখানে মেনু নিয়ে গণ্ডগোল, নাহলে খাবারের সময় নিয়ে।
কি করবেন- এই বিষয়ে আপনাকে তৈরি থাকতে হবে বিয়ের আগে থেকেই। বিয়ের আগে জেনে নেওয়ার চেষ্টা করুন নতুন পরিবারের খাবারদাবার সংক্রান্ত নিয়মগুলি। অর্থাৎ, তাঁরা মাছ-মাংস খেতে ভালবাসেন কিনা, ভাত-রুটি কোনটা পছন্দ করেন, বাড়িতে রান্নার লোক আছে নাকি নিজেদেরই রান্না করতে হয়, বাজারের দায়িত্ব কার এই সব আর কি। আর তার সঙ্গে ধীরে ধীরে, নিজের পছন্দ-অপছন্দগুলিও জানিয়ে দিতে ভুলবেন না। তবে রোজকার খাওয়া নিয়ে এই খুঁতখুতানি এই পরিস্থিতিতে না করলেই নয়? আগে ঢেউ থেকে নিজেদের বাঁচান।
চার নম্বর চ্যালেঞ্জ: স্বামী ছাড়াও পরিবারের বাকি সদস্যরা
বিয়ের পর যদি আপনারা আলাদা সংসার পাততে চলেছেন, তা হলে বলব আপনি ভাগ্যবতী। কিন্তু সকলের তো আর এরকম কপাল হয় না। তাঁদের অন্যদের নিয়েও চলতে হয়। আর সমস্যার সূত্রপাত হয় সেখান থেকেই। এক জায়গায় থাকলে একেকজনের একেক মত, শ্বশুরবাড়ির সব সদস্যের মন জুগিয়ে চলা যা কঠিন কাজ, তার সামনে মঙ্গল অভিযানও নস্যি!
কি করবেন- প্রথম কয়েক মাস একটু লড়ে যান। সকলের মন জুগিয়ে চলার চেষ্টা করুন। তবে খুব খারাপ না লাগলে কারও সঙ্গে ঝগড়া-ঝামেলা বা তর্কাতর্কিতে যাবেন না। এরপর সকলের মানসিকতা যখন মোটামুটি বুঝে যাবেন, তখন আস্তে-আস্তে নিজের ভাল লাগা-মন্দ লাগাগুলোও বুঝিয়ে দিতে শুরু করুন।
পাঁচ নম্বর চ্যালেঞ্জ : পার্সের স্বাধীনতা
আপনি চাকুরিরতা হোন বা না হোন, বিয়ের আগে অন্তত টাকাপয়সা নিয়ে আপনাকে মা-বাবার কাছে কোনও উচ্চবাচ্য করতে হত না। কিন্তু বিয়ের পর তো সেই স্বাধীনতায় টান পড়বেই। কপাল ভাল হলে ভাল, কপাল মন্দ হলে কী হতে পারে, সেকথা নাহয় নাই বললাম। কাজেই এক্ষেত্রে কী করবেন, সেটা অবশ্যই আগে থেকে ভেবে রাখাই ভাল।
কি করবেন- এক্ষেত্রে কিন্তু একজনই আপনাকে সাহায্য করতে পারেন আর তিনি হলেন আপনার স্বামী মানুষটি। আর তাই সুযোগ পেলে তাঁর সঙ্গে প্রথম থেকেই এই ব্যাপারে কথা বলে রাখুন। আর যদি আপনি নিজে রোজগার করেন, তা হলে একটি অব্যর্থ উপায় হল, নিজের রোজগার কম করে বলা। সেক্ষেত্রে আপনার হাতে টাকাপয়সা থাকবে বাড়তি এবং কাউকে সেই ব্যাপারে জবাবদিহিও করতে হবে না! আপনার পার্সের স্বাধীনতা বজায় থাকবে।