আবার একটা নতুন বছর। সময়টা একটু অন্যরকম ঠিকই তবু নতুন আশা নিয়ে পথ চলার শুরু। নতুন বছরে নতুন সংসার যারা শুরু করছেন তাঁদেরকে একটা দিশা দেখানোর চেষ্টা অদ্বিতীয়ার জানুয়ারি সংখ্যায়।

নতুন সংসার মানেই বিয়ে, আর আজকের দিনে বা সময়ে দাঁড়িয়ে বিয়ে মানে তো শুধু মালাবদল, সাতপাক, শুভদৃষ্টি আর বৌভাত নয়! বাঙালি সাবেকীয়ানার সঙ্গে বা ধরনধারণের সাথে আজ রাজ্যের সীমানা পেড়িয়ে ভিনরাজ্যের ভিন্নভাষাভাষীদের রীতিনীতি, অনুষ্ঠান এমনকি আদবকায়দাও মিলেমিশে এক হয়ে গেছে। নতুন কিছুকে অবশ্যই স্বাগত, বলা ভালো সব সময়ই স্বাগত। তাই বাঙালিরও এই প্রাদেশিক রীতিগুলোকে আপন করে নিতে বিশেষ সময় লাগেনি। বাঙালি বিয়েতে এই প্রাদেশিকতার ছোঁয়া বা তাকে একাত্ম করে নেওয়ার মধ্যে শুধু আচার ও রীতিনীতির মধ্যেই তার প্রভাব সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং এই প্রাদেশিক একাত্মতার প্রভাব পড়েছে বিয়ের সাজগোজ থেকে শুরু করে পোশাকের রং, ডিজাইন, বর ও কনের দুই পক্ষেরই সাজসজ্জা, মেকআপ এমনকী গয়নাতেও।

আসলে আগেকার সেই একান্নবর্তী পরিবারের দিন তো এখন আর নেই। বরং বাঙালি বিয়েতে প্রাদেশিক ছোঁয়া লাগার পর এই সম্প্রসারণ পরিবার, পরিজন, আত্মীয়বন্ধু সকলকেই একসাথে কটা দিনের আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।

পুরনো স্মৃতি একটু ঝালিয়ে নিন, ঠিক মনে পড়ে যাবে। সেসময়ের বিয়ে মানে, বিয়ের আগে গায়ে হলুদ, পায়ে আলতা, বিয়ের রাতে বাসর আর বৌভাতের পর ফুলশয্যা।

এখন কিন্তু এই চার হাত এক হবার এই অনুষ্ঠান দুদিনে সীমাবদ্ধ নেই। ধরুন সে সময় বিয়ের বাসরেই যা একটু গানবাজনা হোতো। এখন প্রাক বিবাহ রীতি বা আচার অনুষ্ঠানে গোটা একটা দিনই গানবাজনার জন্য। হ্যাঁ, ‘সঙ্গীত’ এর কথাই বলছি। পাঞ্জাব বা উত্তর পশ্চিম ভারতের এই রীতি বাঙালি বিয়েতে রীতিমতো জায়গা করে নিয়েছে। এরপর ধরুন ‘মেহেন্দি’। আগেকার সেই আলতার রীতির পাশাপাশি এখন মেহেন্দি আচার অনুষ্ঠানে দিব্যি জায়গা করে নিয়েছে বাঙালি বিয়েতে। ভাবুন তো সেই আইবুড়ো ভাতের রীতি বা আচার অনুষ্ঠানের কথা। বাঙালি বিয়েতে প্রি ব্রাইডাল পোশাক থেকে শুরু করে প্রাক বিবাহ ব্যাচেলরস পার্টি, কি না জায়গা করে নেয়নি! তাই প্রাদেশিক সংস্কৃতি, আচার অনুষ্ঠানে একাত্ম এই গোটা বিয়ে পর্বটাই সাত দিন ধরে চলতে পারে। সঙ্গীতের জন্য গোটা একটা দিন, মেহেন্দির জন্য আরও একটা দিন বা গায়ে হলুদের সেই সাদা লাল পাড় শাড়ির জায়গায় সাবলীল ভাবেই মিশে গেছে হলুদ রং এর ছোঁয়া। গায়ে হলুদ, পরণে হলুদ, যারা অংশ নিচ্ছেন তাঁরাও হলুদ পরিধানে গোটা অনুষ্ঠানের মাত্রাই বদলে দিতে পারেন।

বিয়ের এই কটা দিনে রীতি আচার অনুষ্ঠানের মিশেলে বৈচিত্রও এখন চোখে পড়ার মতো। বৈচিত্র্য যেমন বিভিন্ন দিনের পোশাকে ঠিক তেমনি গয়নায়, হেয়ার স্টাইলে এমনকী মেকআপেও এই বৈচিত্র্য দিব্যি জায়গা করে নিয়েছে বাঙালি বিয়েতে। আর এই সবকিছুই যে খুব ব্যয় বহুল হতে হবে তাও নয়, সাধ্য অনুযায়ী সাধপূরণের সুযোগও রয়েছে।

বিয়ের আচার অনুষ্ঠানের এই সাতটা দিনেও বেছে নেওয়া সাতটি আলাদা রং। যা চোখে তো পড়বেই সাথে সাথে বিষয় ভাবনাতেও অন্য মাত্রা এনে দেবে। বাঙালির পুজোতেও যেমন বিষয়ভাবনা বা থিম বড়োসড়ো জায়গা করে নিয়েছে তেমনি বিয়েতেও থিম এখন বহুক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে। সব নিয়েই এই বিয়ে বা নতুন সংসার শুরুর আগে একটা দিশা দেখানোর আন্তরিক চেষ্টা অদ্বিতীয়ার সংখ্যায়। আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে। নতুন বছরে সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন আর সুন্দর হয়ে উঠুন।